বাংলাদেশে গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর জঙ্গিগোষ্ঠিদের বিরুদ্ধে তৎপর হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনেক গোয়েন্দা তথ্য আসছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
“গুলশান হামলার পর দেখা যাচ্ছে যে তাদের (জঙ্গিদের) অপারেশনের চাইতে কাউন্টার অপারেশনটা অনেক বেশি হচ্ছে”, বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আব্দুর রব খান।
তিনি বলেন, গত দুই বছরে শিক্ষক, লেখক এবং ব্লগারসহ অনেকের ওপর একক হামলাগুলো এখন অনেক কমে এসেছে ।
“তবে এতে বেশি আত্মতুষ্টির উপায় নেই। কারণ এটি যেভাবে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে ছড়িয়েছে সেটি আমাদের ভালো করে দেখতে হবে” সতর্ক করে দিয়ে বলেন ড. খান।
শনিবার পৃথক চারটি অভিযানে ১২ জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয় বলে জানায় পুলিশ ও র্যাব। একই দিনে পৃথক চারটি অভিযান এবং এতো ‘জঙ্গি’ নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
নিহতদের মধ্যে নব্য জেএমবি হিসেবে পরিচিত জঙ্গি সংগঠনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়েছে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এছাড়া নিহত বাকি ১০ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। যদিও বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় তারা কিছু নাম ও তথ্য দিয়েছিল, তবে সেটি সত্য কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
নব্য জামায়াতুল মুজাহেদিন বা নিউ জেএমবি নিজেদেরকে বাংলাদেশে তথাকথিত আইএসের সদস্য বলে দাবি করে থাকে।
গত জুলাই মাসে গুলশান এবং শোলাকিয়ায় দুটি সন্ত্রাসী হামলার পর তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালিত হয়। এর মধ্যে কল্যাণপুরে একসাথে ৯ জন নিহত হয়।
সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরী নামে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান এক অভিযানে নিহত হয়। এছাড়া ঢাকায় মেজর জাহিদ নামে অপর এক শীর্ষস্থানীয় নেতা নিহত হয়।
নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মেজর জিয়া নামের একজন এখনো পলাতক। তবে শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেশ জোর দিয়ে বলেছেন যে মেজর জিয়া যেকোন সময় গ্রেপ্তার হবে।
মারজান নামে অপর আরেকজন জঙ্গি নেতার কথাও জানিয়েছিল পুলিশ। সেই মারজানও এখনো পলাতক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রব খান বলছেন, একের পর এক অভিযানের ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গোয়েন্দা তথ্যের প্রবাহও বেড়েছে।
“একটা ঘটনা থেকে আরেকটা জায়গার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সত্যিকারের তথ্য প্রবাহ বেড়ে গেছে”। বলেন ড. খান।
তবে ২০০৫ এবং ২০১০ এর পর শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করার পর জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটি ভুল ছিল।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন স্তরে এদের নেতৃত্ব আছে”।
তবে অভিযান অব্যাহত রাখলে জঙ্গি সংগঠণগুলোর শক্তি যেমন কমে আসবে, তেমনি গোয়েন্দা তথ্যও বাড়বে বলে মনে করেন ড. খান।